সাগর দ্বীপ
সাগর দ্বীপ হল পশ্চিমবঙ্গের একটি দ্বীপ। এটি পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম দ্বীপ। এই দ্বীপটি বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে যথেষ্ট সুনাম পেয়েছে। এই দ্বীপেই রয়েছে কপিল মুনির আশ্রম। প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির সময় বহু মানুষের সমাগম হয় দ্বীপটিতে।
বিবরণ
[সম্পাদনা]
সাগরদ্বীপ হল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ প্রান্তে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ। এই দ্বীপটি গঙ্গা ব-দ্বীপের অংশ। দ্বীপটির আয়োতন ৩০০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি। দ্বীপটি মুড়িগঙ্গা নদী দ্বারা মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এর পশ্চিমে রয়েছে হুগলি নদী উত্তর ও পূর্বে রয়েছে মুড়িগঙ্গা নদী এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। দ্বীপটি বর্তমানে ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে।
সাগর দ্বীপ একটি কমনীয় পর্যটন গন্তব্য। তীর্থযাত্রীদের এবং মজা প্রেমী মানুষ উভয়কে আকর্ষণ করে সুন্দরবনের এই দ্বীপ। সাগরদ্বীপ গঙ্গা নদীর মোহনার অপূর্ব সমুদ্রের আশেপাশের চাঁদ দেখা দেয়। সাগরদ্বীপ একটি রৌপ্য বালি এবং পরিষ্কার নীল আকাশের একর এবং পর্যটকেরা একটি শান্ত মনের সাথু তাদের সপ্তাহান্ত ব্যয় করতে চান শান্ত সমুদ্রের সঙ্গে। সাগরদ্বীপ জনপ্রিয় গঙ্গাসাগর হিসাবে পরিচিত। এই দ্বীপ এখনও অবাস্তব এবং মানুষের কাছে অপরিচিত। সাগরদ্বীপটি ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত হিন্দু তীর্থস্থান কেন্দ্রগুলির একটি। প্রতি বছর ভারতবর্ষের তীর্থযাত্রীরা মকর সংক্রান্তিতে (মধ্য জানুয়ারি) গঙ্গা এবং বঙ্গোপসাগরের মহনায় নদীতে একটি পবিত্র স্নানের জন্য সাগরদ্বীপে একত্রিত হয়। পবিত্র স্নানের পরে, তীর্থযাত্রীরা কপিল মুনি মন্দির বা আশ্রমে 'পূজা' প্রদান করে। মকর সংক্রন্ত উপলক্ষে, গঙ্গাসাগর মেলা এই দ্বীপে সংগঠিত হয়, যা পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম মেলাগুলির মধ্যে একটি। ভারত সেবশ্রম সংঘ মন্দিরটি সবচেয়ে বড়, এই মন্দিরে তিনটি বিশাল চূড়া রয়েছে। এটি প্রাচীন কাল থেকে একটি বিখ্যাত তীর্থযাত্রী কেন্দ্র হয়েছে। মকর সংক্রন্ত উপলক্ষে অনুষ্ঠিত গঙ্গাসাগর মেলা পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম মেলা।
কীভাবে যাবেন
[সম্পাদনা]
সড়ক
[সম্পাদনা]সাগর দ্বীপ কলকাতা থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। জাতীয় সড়ক ১২ দ্বারা দ্বীপটি কলকাতার সঙ্গে যুক্ত। তবে মুড়িগঙ্গার উপড় সেতু নির্মান না হওয়ায় সড়কপথে কলকাতা থেকে প্রথমে কাকদ্বীপ পর্যন্ত যাওয়ার পর লঞ্চ বা নৌযানে নদী পার হয়ে সাগর দ্বীপে প্রবেশ করতে হয়। কলকাতা থেকে সরকারি ও বেসরকারি বাস পরিষেবা রয়েছে কাকদ্বীপ পর্যন্ত।
রেলপথ
[সম্পাদনা]রেলপথে সাগর দ্বীপ যাওয়ার জন্য কাকদ্বীপ রেল স্টেশন ব্যবহার করতে হয়। শিয়ালদা স্টেশন থেকে দক্ষিণ শাখার লোকাল ট্রেনে লক্ষ্মীকান্তপুর হয়ে কাকদ্বীপ স্টেশনে পৌঁছে নদী পার হয়ে সাগর দ্বীপে যেতে হয়। সাগরদ্বীপ স্থানীয় লোকমুখে গঙ্গাসাগর নামে পরিচিত। শিয়ালদা থেকে কাকদ্বীপের পরে শেষ স্টেশন নামখানা নেমে সেখান থেকে হাতানি-দোয়ানি নদীর জেটি ধরেও যাওয়া চলে এখানে।
জলপথ
[সম্পাদনা]হুগলি নদীপথে সুন্দরবনগামী বিভিন্ন জলযান সাগর দ্বীপে যাতায়াত করে।
ফেরি
[সম্পাদনা]এখনও ফেরি ভাড়া কাকদ্বীপের লট নম্বর ৮ নং জেট থেকে সাগরের কচুবরিয়া পর্যন্ত 8 টাকা। নামখানা জেটিঘাট থেকে সকাল 7.30 থেকে প্রায় ৪৫মিনিট / ১ ঘন্টা অন্তর-অন্তর লঞ্চ ছাড়ে গঙ্গাসাগরের জেটিঘাট চেমাগুড়ি যাবার জন্যে। শেষ লঞ্চ বিকেলে চেমাগুড়ি ছেড়ে নামখানা জেটিঘাট (নারায়ণপুর জেটিঘাট ) ঢোকে। ২০২৫ সালের মে মাস অনুসারে ভাড়া আছে ৪০ (চল্লিশ) টাকা ও সময় লাগে এক ঘন্টার মতো। লঞ্চ চেমাগুড়িতে নামানোর পর সেখান থেকে টোটো বা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে সহজেই এক ঘন্টায় পৌঁছানো যায় গঙ্গাসাগর গাড়িস্ট্যান্ডে (টোটো শেয়ারে নেয় ৬০ টাকা ও রিজার্ভে ২৭০ টাকা ও গঙ্গসাগর থেকে চেমাগুড়ি ফিরতে রিজার্ভে ৩০০টাকা নিচ্ছে বর্তমানে)।
আকাশপথ
[সম্পাদনা]কলকাতার বেহালা বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টর পরিষেবা রয়েছে সাগর দ্বীপ পর্যন্ত। এই পরিষেবা মূলত কার্যকর করা হয় সাগর মেলার সময়।
কী দেখবেন
[সম্পাদনা]
- 1 ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ মন্দির, গঙ্গাসাগর।
- 2 কপিল মুনির আশ্রম ও মন্দির, দক্ষিণ সাগর। কপিল মুনির মন্দিরটি হল সাগরদ্বীপের সবচেয়ে পবিত্র স্থান।
- 3 সাগর বাতিঘর ও বন্দর, বেগুয়াখালি, বেগুয়াখালি গ্রাম, পশ্চিমবঙ্গ, ৭৪৩৩৭৩। সাগর দ্বীপের বাতিঘরটির আশেপাশের দৃশ্য বেশ মনোরম
- 4 সমুদ্র সৈকত। বাংলার একটি চমৎকার সমুদ্র সৈকত সপ্তাহান্তে ভ্রমণের স্থান।
- 5 ওঙ্কারনাথ মন্দির। সাগর দ্বীপের অনেক ধর্মীয় স্থানগুলির একটি সপ্তাহান্তে ভ্রমণের স্থান।
- 6 রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম।
- চিমাগুরি মুডফ্লাট- এটি ম্যানগ্রোভ বনের প্রবেশ বিন্দু।
- মেলার মাঠ, সাউথ সাগর .. বাংলার ধর্মীয় স্থান।
- সাগর মেরিন পার্ক, দক্ষিণ সাগর।
- সুষমা দেবীচৌধুরানী সামুদ্রিক জৈবিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। (এসডিএমবিআই), বামনখালী
- বায়ু মিলস- দ্বীপে বায়ু শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।
কী করবেন
[সম্পাদনা]- মাছ ধরা
- উপকূলীয় ভ্রমণ (ট্রেক)
খাওয়া
[সম্পাদনা]সাগর দ্বীপের অনেকগুলি সস্তা হোটেল আছে। যেগুলি ভ্রমণকারী বা পর্যটকদের কাছে ভাল মানের বাঙালি খাবার সরবরাহ করে। সকাল ১০টায় কুপন সংগ্রহ করে প্রসাদ খেতে পারেন কপিল মুনির আশ্রমে। নাহলে আশ্রমকে কেন্দ্র করে সাত সকাল থেকেই নানান টিফিন (চা, পেটাই পরোটা (২০২৫ এর মে মাস অনুসারে ১৫০গ্রাম ২০টাকা, লুচি ঘুগনি (৪টে ২০টাকা), দুপুর ১২ টা নাগাদ মন্দিরের কাছের হোটেল বা ধাবাগুলোয় নানান নিরামিষ (রুটি, ভাত, আলুভাজা, শাক, চাটনি ও একটু দূরে আমিষ পদ যেমন ডিম, মাছও পাওয়া যায়)। দাম মোটামুটি ৭০ - ১২০ টাকার ভিতর। ময়দার তৈরি রসগোল্লা, পান্তুয়া (৭ টাকা করে পিস) ও কাকদ্বীপ থেকে আসা খুব সুন্দর দই (২০০ গ্রাম ৩০ টাকা) এখানে পাওযা যায়। ফলমূল চাইলেও কিনতে পারেন; ভালো কাঁঠালি কলা ৩ থেকে ৪টাকা পিস দরে (কলা ওখানে প্রচুর) পাওয়া যায়, তবে বাকি ফলমূলের দাম একটু বেশি। কেউ চাইলে সব্জি যেমন কুমড়ো, আলু, বেগুন, শসা, ইত্যাদি কিনে দোকানে কিছু টাকা দিয়ে রান্না করিয়ে নিয়েও খাওয়া যায়।
পানীয়
[সম্পাদনা]সর্বদা মিনারেল জল এবং অন্য কোনও জিনিস এড়িয়ে চলা ("মিনারেল" নামক জলটি "বিশুদ্ধ" নাও হতে পারে।)!
রাত্রিযাপন
[সম্পাদনা]থাকার জন্য, দক্ষিণ সাগর এলাকায় অনেক জায়গা আছে। সাগর মেলার সময় বা অন্য সময়কালে, বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ও অ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী ক্যাম্প/বাসস্থান ছুটির সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। সাগর দ্বীপের ভ্রমণের জন্য সাগর দ্বীপে যাওয়ার পূর্বেই আপনার বাসভবন বা রাত্রিযাপনের স্থানটি বুকিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনি আপনার নিজের গদি এবং ঘুমের ব্যাগ আনলে আপনি সম্ভবত আশ্রয় পাবেন।
সাগর দ্বীপে একটি পর্যটন লজ এবং একটি যুব হোস্টেল আছে। এছাড়াও ভারত সেবাশ্রম সংঘের পরিচালিত একটি ধর্মশালায় থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
বঙ্গোপসাগর উপকূলে ছুটি কাটানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মিষ্টির ধর্মশালা এবং সাগরদীপের গেস্ট হাউস সেখানে আছে। সাগর দ্বীপে দিন এবং রাত কাটানোর জন্য কিছু জায়গা, যেগুলি বছরের পর বছর পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের জন্য আশ্রয় প্রদান করে:
- ভারত সংস্কৃতি সংঘের ধর্মশাল
- কাপিল মুনির সংঘের ধর্মশালা
- পি.ডব্লিউ.ডি জেলা পরিষদ বাংলো
- সাগরদ্বীপের টুরিস্ট লজ এবং ইয়ুথ হোস্টেল (প.ব. সরকারের যুব কল্যাণ দপ্তরের মৌলালীর অফিস থেকে অফলাইন বুক করতে পারা যায় বা অনলাইন দ্বারা বুক করা যায়, এখানে ২২৫-১৭০০ টাকার নানান মানের রুম পাওয়া যায়)
- শঙ্করাচার্য আশ্রমের ধর্মশাল
- স্টেট ইয়ুথ হোস্টেল, ☎ +৯১ ৩৩ ২২৪৮ ০৬২6। সংযুক্ত স্নানের সাথে একটি ডাবল বেড রুমের ভারা হল ₹ ১০০/দিন। চেকিং টাইম হল দুপুর ১২ টা। কলকাতার যুব পরিষেবা অধিদপ্তর, ৩২/১, বি.বি.ডি. থেকে বুকিং করা যেতে পারে।