বান্দরবান
বান্দরবন জেলা বাংলাদেশের একটি জেলা। এটি চট্টগ্রাম বিভাগ এর অন্তর্গত। বাংলাদেশের ভিতরে, বান্দরবানকে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল জুড়ে ঘিরে রয়েছে কক্সবাজার, উত্তর-পশ্চিমে চট্টগ্রাম, উত্তরে রাঙামাটি এবং পূর্বে রয়েছে মায়ানমারের চিন প্রদেশ এবং আরাকান প্রদেশের সীমান্ত।
বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে একটি বান্দরবান এবং এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে কম জনবসতিসম্পন্ন স্থান। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ সাকা হাফং (১০৫২ মিটার)। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং (৮৮৩ মিটার) এবং সর্বোচ্চ খাল রাইখিয়াং এই জেলায় অবস্থিত।
জানুন
[সম্পাদনা]নামকরণ
[সম্পাদনা]বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের প্রচলিত রূপকথায় আছে, এ এলাকায় একসময় অসংখ্য বানর বাস করত। আর এই বানরগুলো শহরের প্রবেশমুখে ছড়ার পাড়ে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। এক সময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃ্দ্ধি পাওয়ায় বানরের দল ছড়া পাড় হয়ে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পাড় হয়। বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে পায় এই জনপদের মানুষ। এই সময় থেকে এই জায়গাটির পরিচিতি লাভ করে ম্যাঅকছি ছড়া নামে। অর্থাৎ মারমা ভাষায় ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছি অর্থ বাঁধ। কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম রুপ লাভ করে বান্দরবান হিসাবে। বর্তমানে সরকারি দলিল পত্রে বান্দরবান হিসাবে এই জেলার নাম স্থায়ী রুপ লাভ করেছে। তবে মারমা ভাষায় বান্দরবানের নাম রদ ক্যওচি ম্রো।
কীভাবে যাবেন?
[সম্পাদনা]আকাশপথ
[সম্পাদনা]ঢাকা থেকে বান্দরবান এর সরাসরি বিমান যোগাযোগ নেই। প্রথমে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে পূরবী বা পূর্বাণী বাস যোগে বান্দরবান যাওয়া যায়। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একাধিক বিমান প্রতিদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করে।
সড়কপথ
[সম্পাদনা]বান্দরবান যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো বাস। ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান বাসে যেতে সাধারণত ৬ঘণ্টা - ১০ঘণ্টা সময় লাগে। নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা অথবা গাড়ি ভাড়া করেও বান্দরবান যাওয়া সম্ভব। এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখানে থেকে বাসে করেও বান্দরবান যাওয়া যায়। এছাড়াও রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজার থেকেও বান্দরবান যাওয়া যায়।
বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে পূরবী এবং পূর্বাণী নামক দুটি ডাইরেক্ট নন এসি বাস আছে ১ ঘণ্টা পর পর বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ভাড়া জনপ্রতি-৯০ টাকা। প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত প্রতি ১ ঘণ্টা পর পর এই পরিবহনের বাসগুলো চট্টগ্রাম-বান্দরবান-চট্টগ্রাম রুটে যাতায়াত করে।
এখানকার সড়কপথে সংযোগগুলো হচ্ছে চিম্বুক - রুমা, বান্দরবান - রোয়াংছড়ি - রুমা, আজিজনগর - গজালিয়া - লামা, খানহাট - ধোপাছড়ি - বান্দরবান, বান্দরবান - চিম্বুক - থানচি - আলীকদম - বাইশারী - ঘুনধুম এবং চিম্বুক - টঙ্কাবতী - বারো আউলিয়া।
ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। ঢাকা থেকে প্রথমে চট্টগ্রাম তারপর সেখান থেকে পূরবী বা পূবার্নী বাসযোগ সরাসরি বান্দরবান যাওয়া যায়।
নৌপথ
[সম্পাদনা]এখানে কোন আন্তঃজেলা নৌ যোগাযোগ নেই।
দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা]
- 1 বুদ্ধ ধাতু জাদি (স্বর্ণ মন্দির)। বান্দরবন শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বালাঘাটায় অবস্থিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মন্দির। স্থানীয়ভাবে স্বর্ণমন্দির নামে পরিচিত। এটি স্বর্ণমন্দির নামে পরিচিত পেলেও এটি স্বর্ণ নির্মিত নয়। মূলত সোনালী রঙের জন্যেই এটির নাম হয়েছে স্বর্ণমন্দির। এই থেরাবেড়া বৌদ্ধমন্দিরটি ৬০ মিটার উঁচু পর্বতের শীর্ষদেশে অবস্থিত। মন্দিরটি দক্ষিণপূর্ব এশীয় স্থাপত্যশৈলীতে তৈরী করা হয়েছে এবং এখানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মূর্তিটি আছে। সন্ধ্যা ছয়টার পরে মন্দিরে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ। মন্দির চত্ত্বরে শর্টপ্যান্ট, লুঙ্গি এবং জুতা পায়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ। পাহাড়ের চূড়ায় দেবতাপুকুর নামে একটি লেক আছে।
- 2 চিম্বুক পাহাড়। বান্দরবন শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের অন্যতম উঁচূ শৃঙ্গ চিম্বুক পাহাড় অবস্থিত। চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে বম নৃগোষ্ঠীর গ্রাম দেখতে পাওয়া যায়। অল্প কিছুদূরে ম্রোদের গ্রাম অবস্থিত। শহর থেকে এক দিনেই চিম্বুক পাহাড় এবং বম ও ম্রো গ্রাম ঘুরে আসা সম্ভব।
- 3 বগালেক (বগাকাইন লেক)। ছোট ছোট গ্রাম এবং পাহাড়কে পাশ কাটিয়ে বয়ে চলেছে নান্দনিক এই জলাশয়টি। বগালেক বাংলাদেশের সব থেকে সৌন্দর্যময় প্রাকৃতিক লেক। বান্দরবনের রুমা সদর উপজেলা থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত লেকটির আয়তন ১৫ একর। লেকের নীল পানি পর্যটকদের মুগ্ধ করে। লেকটির তৈরী হওয়ার পিছনে অনেক লোকগল্প প্রচলিত আছে। শীত মৌসুমে বগালেকে পর্যটকের ভিড় উপচে পড়ে। বর্ষাকালে বগালেক এলাকায় ভ্রমণ কঠিন হয়ে পড়ে। বগালেকের আশপাশে বম এবং খুমি নৃগোষ্ঠীর লোক বাস করে।
- 4 নীলগিরি (নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র)। নীলগিরি অন্যতম উঁচু পাহাড় এবং বাংলাদেশ সৌন্দর্য্যময় পর্যটন স্পট। বান্দরবন শহর থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এখানে একটি রিসোর্ট আছে। সেনা কর্মকর্তাদের সহায়তায় এখানে বুকিং সম্পন্ন করতে হয়। এখানে রেস্তোরাঁ, হেলিপ্যাড, সুসজ্জিত কটেজ ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে। বিদেশি পর্যটকগনের এখানে অবস্থানের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে।
- নীল দিগন্ত পর্যটন কেন্দ্র: নীলগিরি থেকে নীল দিগন্ত পর্যটন কেন্দ্রটি মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এর ভিউ পয়েন্ট থেকে কেওক্রাডং ও তাজিংডং পর্বত দেখা যায়।
- শৈলপ্রপাত: বান্দরবন থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে থানচি যাওয়ার পথে মিলনছড়ি নামক স্থানে চমৎকার এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এটার রক্ষণাবেক্ষনের দ্বায়িত্বে আছে।
- রাজবিহার এবং উজানিপাড়া বিহার: স্থানীয়ভাবে বৌদ্ধ মন্দিরসমূহ কিয়াং এবং বিহার নামে পরিচিত। জাদিপাড়ায় অবস্থিত রাজবিহার খুবই সুপরিচিত। উজানিপাড়ায় অবস্থিত উজানিপাড়া বিহারটিও উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।
- নীলাচল বান্দরবান শহর থেকে চাঁদের গাড়ি, বেবি টেক্সি, জীপ, কার ইত্যাদি যোগে যাওয়া যায়।
- শুভ্রনীলা বান্দরবান শহর থেকে চাঁদের গাড়ি, বেবি টেক্সি, জীপ, কার ইত্যাদি যোগে যাওয়া যায়।
- 5 মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র। মেঘলায় লেকের উপর দুটি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। এছাড়া চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে সাফারি পার্ক, শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, উন্মুক্ত মঞ্চ, চা বাগান, কেবল কার ও প্যাডেল বোট। মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে রাতে থাকার জন্য জেলা প্রশাসনের রেস্ট হাউজ ভাড়ায় পাওয়া যায়। মেঘলা রেস্ট হাউজের মোট ৪ টি কক্ষের প্রতিটির জন্য ২০০০ টাকা লাগে। এছাড়া পর্যটন করপোরেশনের হোটেলে বুকিং দিতে ফোন করতে পারেনঃ ০৩৬১-৬২৭৪১ এবং ০৩৬১-৬২৭৪২ নম্বরে। এছাড়া হোটেল ফোর স্টারে সিঙ্গেল রুমের ভাড়া পড়বে ৩০০ টাকা, ডাবল রুম ৬০০ টাকা এবং এসি রুম ১২০০ টাকা। আর হোটেল থ্রি স্টারে থাকতে চাইলে নন-এসি ফ্ল্যাট ২৫০০ টাকা এবং এসি ফ্ল্যাট ৩০০০ টাকায় পাবেন। হোটেল প্লাজা বান্দরবানে সিঙ্গেল রুমের ভাড়া ৪০০ টাকা, ডাবল রুম ৮৫০ টাকা ও এসি রুম ১২০০ টাকায় পাওয়া যায়। হলিডে ইনে সাধারণ রুম ১০০০ টাকা, নন-এসি ১৩০০ টাকা, এবং এসি রুম পড়বে ১৫০০ টাকা। তবে সময়ের পরিবর্তনে উল্লেখিত ভাড়ার পরিমাণ কম কিংবা বেশি হতে পারে।
- শৈলপ্রপাত ঝর্ণা বান্দরবান শহর থেকে চাঁদের গাড়ি, বেবি টেক্সি, জীপ, কার ইত্যাদি যোগে যাওয়া যায়।
- কানা পাড়া পাহাড় বান্দরবান শহর থেকে চাঁদের গাড়ি, বেবি টেক্সি, জীপ, কার ইত্যাদি যোগে যাওয়া যায়।
- প্রান্তিক লেক বান্দরবান শহর থেকে চাঁদের গাড়ি, বেবি টেক্সি, জীপ, কার ইত্যাদি যোগে যাওয়া যায়।
- সাঙ্গু নদী বান্দরবান শহরের ট্রাফিক মোড় থেকে ২ মিনিটে পায়ে হাঁটার পথ।
- বোমাং রাজার বাড়ি বান্দরবান শহরের ট্রাফিক মোড় থেকে রিক্সা এবং ৫ মিনিট পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়।
- ন্যাচারাল পার্ক বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার আগে এ পার্কের অবস্থান। প্রায় ১০০ একর পাহাড়ি টিলায় এই সুন্দর স্পটটি ওসমান গণি নামীয় একজন প্রকৃতিপ্রেমী নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছেন। ফলের বাগান, ফুলের বাগান, চা বাগান, কফি বাগান, আম বাগান ছাড়াও পেঁপে, পেয়ারা, কলা, আমলকী, হরিতকি, বহেরা, পাইন্যাগুলা ছাড়াও অনেক ধরনের বাগান রয়েছে।
- অন্যান্য স্থান: থানচি, প্রান্তিক লেক, জীবননগর এবং কিয়াচলং লেক।
রাত্রিযাপন
[সম্পাদনা]বান্দরবানে থাকার জন্যে বেশ কিছু হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। বান্দরবান শহর ও তার আশেপাশেই হোটেল ও রিসোর্ট গুলোর অবস্থান। বান্দরবান থাকার জন্যে যে সকল হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে তার মধ্যে:
- হোটেল হিল ভিউ: বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। ভাড়া ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
- হোটেল হিলটন: বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর কাছেই। ভাড়া ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
- হোটেল প্লাজা: বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫মিনিট হাঁটা দূরত্বে। ভাড়া ৬০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
- রিভার ভিউ: শহরের সাঙ্গু নদীর তীর ঘেষে হোটেলটির অবস্থান। ভাড়া ৬০০ থেকে ২০০০ টাকা।
- পর্যটন মোটেল: পাহাড় ও লেকের পাশেই অবস্থিত। শহর থেকে ৪ কি:মি: দুরে মেঘলায় অবস্থিত। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

- 1 সাইরু হিল রিসোর্ট (বান্দরবন শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-থানচি সড়কের চিম্বুক পাহাড়ের আগে এর অবস্থান।)। প্রায় হাজার ফুট উঁচু পাহাড় চূড়ায় নান্দনিক ও আধুনিক বিলাসবহুল এই রিসোর্টে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ভোজন এবং রাত্রিযাপন দুটোই বিলাসি মূল্যে পরিবেশিত হয়। রাত্রিযাপনের জন্যে রয়েছে ৪ ধরণের এবং বিভিন্ন মানের ২০টি কটেজ, যেখান থেকে চিম্বক প্রকৃতির দৃশ্য উপভোগের সুযোগ সহ নানাবিধ সুবিধা রয়েছে। সাইরুতেই নিজস্ব খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। পছন্দমতো বিভিন্ন খাবার খাওয়া যাবে। এছাড়াও রয়েছে আদিবাসীদের বিশেষ খাবার।
১৬,০০০-২১,০০০।
খাওয়া দাওয়া
[সম্পাদনা]বান্দরবান শহরে বেশ কিছু বাঙালি এবং আদিবাসী খাবারের হোটেল আছে।
ছবিঘর
[সম্পাদনা]- বুদ্ধ ধাতু জাদি মন্দিরের মূল অংশ
- কোনাগমন বুদ্ধ, বুদ্ধ ধাতু জাদি
- সেতুর উপর থেকে সাঙ্গু নদী
- নীলাচল
- শীতের মেঘে ঢাকা নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র