পূর্ব আফ্রিকা
পূর্ব আফ্রিকা আফ্রিকার সেই অংশ যা গ্রেট রিফট ভ্যালির আশেপাশে এবং পূর্বে অবস্থিত, ভৌগোলিকভাবে যা উত্তরে এডেন উপসাগর, পূর্বে গার্দাফুই চ্যানেল এবং দক্ষিণ-পূর্বে মোজাম্বিক চ্যানেল পর্যন্ত বিস্তৃত।
পূর্ব আফ্রিকাকে মানবজাতির জন্মস্থান বলা হয়, 'হোমো' গণের প্রথম প্রজাতি এখানেই বিবর্তিত হয় এবং পরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এই অঞ্চলটি তার বিস্তৃত সাভানার জন্যও বিখ্যাত, যেখানে পরিচিত আফ্রিকান উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের দেখা মেলে।
দেশ এবং অঞ্চলসমূহ
[সম্পাদনা]বুরুন্ডি টাংগানিকা হ্রদের তীরে অবস্থিত; বেশিরভাগ বনভূমি ধ্বংস হয়েছে এবং ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট করার মতো খুব অল্প কিছুই রয়েছে। |
জিবুতি ইয়েমেনের বিপরীতে, অ্যাডেন উপসাগরের অপর পাশে ছোট একটি দেশ, যার সংস্কৃতি মূলত সোমালি। |
ইরিত্রিয়া এই তুলনামূলকভাবে ইথিওপিয়ার মতো ছোট একটি দেশ, বিশ্বের প্রাচীনতম খ্রিস্টান সম্প্রদায়গুলোর একটি ধারণ করে এবং আরব সংস্কৃতির প্রভাবও রয়েছে। |
ইথিওপিয়া আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যা; বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন খ্রিস্টান দেশ, যেখানে রয়েছে দুর্গ, সুন্দর গির্জা এবং অসাধারণ খাবার। |
কেনিয়া বিশ্বমানের সাফারি, মনোরম সমুদ্রতট এবং সমৃদ্ধ ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত। |
রুয়ান্ডা কুয়াশাচ্ছন্ন জঙ্গলে গরিলাদের আবাসস্থল। |
সোমালিয়া রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং গৃহযুদ্ধের চ্যালেঞ্জে জর্জরিত উপকূলীয় দেশ। |
সোমালিল্যান্ড পূর্ব আফ্রিকার সর্বাধিক নবীন দেশ, ১৯৯১ সালে প্রতিবেশী সোমালিয়া থেকে আলাদা হয়ে যায়। |
তানজানিয়া পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্বতন্ত্র পর্বত মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো; বিশ্বের অন্যতম সেরা গেম পার্ক সেরেঙ্গেটি; আফ্রিকার মালদ্বীপ নামে পরিচিত জানজিবার; এবং সোয়াহিলি উপকূলের ঔপনিবেশিক-পূর্ব শহরগুলো এখানে অবস্থিত। |
উগান্ডা বন্যপ্রাণীতে ভরপুর এবং বিলুপ্তপ্রায় পর্বত গরিলা দেখতে কঙ্গোর জঙ্গলে অভিযানের জন্য এটি অন্যতম সেরা স্থান |
- উপকূলবর্তী পূর্ব আফ্রিকান দ্বীপপুঞ্জ (যার মধ্যে রয়েছে মাদাগাস্কার) নিজেদের একটি স্বতন্ত্র অঞ্চল গঠন করেছে।
শহরসমূহ
[সম্পাদনা]- 1 আদ্দিস আবাবা — ইথিওপিয়ার বিশাল রাজধানী শহর এবং এনজিও ও আফ্রিকান ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
- 2 আরুশা — তানজানিয়ার উত্তরের সাফারি সার্কিটের প্রবেশদ্বার।
- 3 দারুস সালাম — তানজানিয়ার গরম ও আর্দ্র মহানগরী, যেখানে ভ্রমণকারীদের রাখার মতো বিশেষ কিছু নেই, তবে এটি অঞ্চলের একটি বড় ট্রানজিট পয়েন্ট।
- 4 কাম্পালা — উগান্ডার সরগরম, বন্ধুত্বপূর্ণ রাজধানী।
- 5 কিগালি — গণহত্যা স্মৃতিস্তম্ভ ছাড়া রুয়ান্ডার রাজধানীতে পর্যটকদের আকর্ষণের তেমন কিছু নেই; এটি মূলত একটি অতিক্রম করার মতো শহর।
- 6 মোম্বাসা — কেনিয়ার ঐতিহাসিক উপকূলীয় শহর, যা ২,৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো বলে মনে করা হয়।
- 7 নাইরোবি — কেনিয়ার রাজধানী এবং একমাত্র জাতীয় রিজার্ভের আবাসস্থল যা শহরের মধ্যে অবস্থিত।
- 8 স্টোন টাউন — জানজিবারের রাজধানী এবং সোয়াহিলি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
অন্যান্য গন্তব্য
[সম্পাদনা]
- 9 আকসুম (আক্সুম) — ইথিওপিয়ার প্রাচীন রাজধানী, যা তার স্তম্ভ ও বিভিন্ন রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের জন্য বিখ্যাত।
- 10 লালিবেলা — মধ্যযুগীয় পাথর কাটা গির্জাগুলোর সমভাবে পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের আকর্ষণ করে।
- 11 ভিক্টোরিয়া হ্রদ — আফ্রিকার সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ হ্রদ, যা উগান্ডা, কেনিয়া এবং তানজানিয়ার সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত।
- 12 কিলিমাঞ্জারো — আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বত এবং তানজানিয়ার জনপ্রিয় ট্রেকিং গন্তব্য।
- 13 রুওয়েনজোরি জাতীয় উদ্যান — উগান্ডার 'মুন পর্বতমালা'র প্রায় পৌরাণিক ও অপার্থিব দৃশ্যের আবাসস্থল।
- 14 সেরেঙ্গেটি জাতীয় উদ্যান — তানজানিয়ার বিশাল জাতীয় উদ্যান, সম্ভবত আফ্রিকান সাফারির প্রতীক; এটি কেনিয়ার মাসাই মারা জাতীয় উদ্যান হিসেবে সীমান্ত পার হয়ে অব্যাহত থাকে।
- 15 সিমিয়েন পর্বত জাতীয় উদ্যান — ইথিওপিয়ার চমৎকার পর্বতমালার দৃশ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
- 16 ভলকানোস জাতীয় উদ্যান — রুয়ান্ডাতে অবস্থিত এই উদ্যানটি ঘন রেইনফরেস্ট ও আগ্নেয়গিরিময় ভিরুঙ্গা পর্বতমালার জন্য বিখ্যাত এবং সম্ভবত পৃথিবীর সেরা স্থান বিরল পর্বত গরিলা দেখার জন্য; এটি উগান্ডাতে প্রবেশ করে গাহিঙ্গা গরিলা জাতীয় উদ্যান নামে পরিচিত।
বোঝার বিষয়
[সম্পাদনা] রমজান রমজান হল ইসলামি বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে নবম মাস, যে মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলিমগণ ইসলামি উপবাস সাওম পালন করে থাকে। রমজান মাসে রোজাপালন ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়তম। রমজান মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২৯ অথবা ত্রিশ দিনে হয়ে থাকে যা নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ব্যক্তির উপর সাওম পালন ফরয, কিন্তু অসুস্থ, গর্ভবতী, ডায়বেটিক রোগী, ঋতুবর্তী নারীদের ক্ষেত্রে তা শিথিল করা হয়েছে। রোজা বা সাওম হল সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা গুনাহের কাজ এবং (স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে) যৌনসংগম থেকে বিরত থাকা। এ মাসে মুসলিমগণ অধিক ইবাদত করে থাকেন। কারণ অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসের লাইলাতুল কদর নামক রাতে কুরআন নাযিল হয়েছিল, যে রাতকে আল্লাহ তাআলা কুরআনে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলেছেন। এ রাতে ইবাদত করলে হাজার মাসের ইবাদতের থেকেও অধিক সওয়াব পাওয়া যায়। রমজান মাসের শেষদিকে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে মুসলমানগণ ঈদুল-ফিতর পালন করে থাকে যেটি মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি।
আপনি যদি রমজানের সময় পূর্ব আফ্রিকা ভ্রমণ করার চিন্তা করে থাকেন, তবে রমজানে ভ্রমণ পড়ে দেখতে পারেন। |
ইতিহাস
[সম্পাদনা]ঐতিহাসিক যুগে, পূর্ব আফ্রিকা বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বান্টু জনগণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয় জনগণ, ইসলামি বিশ্ব এবং পাশ্চাত্য বিশ্বের অভিবাসন ও সাংস্কৃতিক প্রভাব।
ঔপনিবেশিক যুগের আগে সোয়াহিলি উপকূল—যা বর্তমানে কেনিয়া, তানজানিয়া ও উত্তর মোজাম্বিকের উপকূলীয় এলাকা নিয়ে গঠিত অত্যন্ত সমৃদ্ধ অঞ্চল ছিল। এখানে জাঞ্জিবার, মোম্বাসা এবং কিলওয়া কিসিওয়ানির মতো বহু ধনী নগর-রাষ্ট্র ছিল। বিশেষ করে জাঞ্জিবার ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র, যেখান থেকে বাণিজ্য পথগুলো ভারত মহাসাগর ও সাহারা মরুভূমি অতিক্রম করত। এসব পথের মধ্যে আরব দাস বাণিজ্যের পথও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ইথিওপিয়া বিশ্বের প্রথম দেশগুলোর একটি, যারা খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করেছিল। দেশটির খ্রিস্টীয় ঐতিহ্য অনেক ইউরোপীয় দেশের চেয়েও প্রাচীন এবং এখানকার অসংখ্য চমৎকার গির্জা সেই ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের প্রমাণ বহন করে।
আধুনিক সময়ে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলো ভিন্নভাবে বিকাশ লাভ করেছে। ১৯শ শতকের শেষ দিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য কেপ থেকে কায়রো পর্যন্ত একটি উপনিবেশিক চেইন গড়ে তুলতে চেয়েছিল, যেখানে তারা জার্মান পূর্ব আফ্রিকার সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর বর্তমান তানজানিয়া ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে আসে।
ইথিওপিয়া ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতা প্রতিহত করার জন্য বিখ্যাত (১৯৩০-এর দশকে ইতালির সংক্ষিপ্ত দখল ছাড়া)। দারবিশ রাষ্ট্রও অন্য অনেক আফ্রিকান প্রাক-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের তুলনায় দেরিতে উপনিবেশিক দখলে আসে।
অর্থনৈতিকভাবে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলো ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে—কেনিয়া একটি উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে বিবেচিত, আর সোমালিয়া বিশ্বের সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলোর একটি।
ভূগোল
[সম্পাদনা]পূর্ব আফ্রিকায় রয়েছে দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য—আফ্রিকার বৃহৎ হ্রদসমূহ এবং মহাদেশের অধিকাংশ উচ্চতম পর্বত এখানেই অবস্থিত। এই অঞ্চলটি পর্বত, মরুভূমি এবং আফ্রিকার বৃহৎ হ্রদ দ্বারা আফ্রিকার বাকি অংশ থেকে ভৌগোলিকভাবে কিছুটা বিচ্ছিন্ন।
এখানকার জলবায়ু আটলান্টিক উপকূলের অনুরূপ অক্ষাংশে থাকা অঞ্চলগুলোর তুলনায় অনেক বেশি শুষ্ক। ফলে পূর্ব আফ্রিকার ভূমিভাগ প্রধানত সাভানা ও মরুভূমি দ্বারা আচ্ছাদিত।
যদিও পূর্ব আফ্রিকার জলবায়ু সাধারণভাবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় (সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলোতে মাঝে মাঝে বরফ দেখা যায়), তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা অঞ্চলভেদে অনেক ভিন্ন হয়। এখানে রয়েছে জঙ্গল, সাভানা এবং মরুভূমির মতো বৈচিত্র্যময় পরিবেশ।
আলাপন
[সম্পাদনা]পূর্ব আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার রয়েছে এবং ইংরেজিতে স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করা যায়।
এই অঞ্চলের একটা বড় অংশে সোয়াহিলি ভাষায় কথা বলে, বিশেষ করে উগান্ডা, তানজানিয়া এবং কেনিয়াতে, যেখানে এটি একটি সরকারী ভাষা হিসেবে স্বীকৃত।
প্রবেশ
[সম্পাদনা]আকাশ পথে
[সম্পাদনা]এই অঞ্চলে ভ্রমণকারীদের বেশিরভাগই বিমানে করে আসেন। পূর্ব আফ্রিকার বড় বড় রাজধানী শহরগুলো ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিমানে সহজেই পৌঁছানো যায়। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইন হলো ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স, যাদের আদ্দিস আবাবায় একটি বড় ও ব্যস্ত হাব রয়েছে। তারা আমেরিকা, পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি শহর এবং আফ্রিকার অনেক ছোট শহরের সাথেও সংযোগ রক্ষা করে।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কেনিয়া এয়ারওয়েজ, যাদের নাইরোবিতে নিজস্ব একটি বড় হাব আছে। তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও, রুয়ান্ডার রুয়ান্ডএয়ারের কার্যক্রমও উল্লেখযোগ্য। তবে বুরুন্ডি, জিবুতি, ইরিত্রিয়া এবং সোমালিয়া খুব সীমিতভাবে সংযুক্ত এবং এসব দেশে যেতে হলে সাধারণত ইথিওপিয়া হয়ে ট্রানজিট নিতে হয় বা দুবাই থেকে কোনো অনির্ভরযোগ্য স্থানীয় এয়ারলাইনে যাত্রা করতে হয়।
এই অঞ্চলে বিমান ভ্রমণ সাধারণত ব্যয়বহুল, যদিও সস্তা ফ্লাইটের অফারে এখন পূর্ব আফ্রিকার নাম উঠে আসছে। ইউরোপীয় বাজেট ও চার্টার অপারেটররা মোম্বাসা ও জাঞ্জিবারের মতো উপকূলীয় গন্তব্যে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী ফ্লাইট পরিচালনা করে।
ঘোরাফেরা
[সম্পাদনা]প্রশস্ত ও সমতল ভূখণ্ড থাকার কারণে এখানে চলাচলের সবচেয়ে ব্যবহারিক উপায় হলো গাড়ি চালানো (সাধারণত অফরোড ড্রাইভিং) এবং সাধারণ বিমানে চলাচল।
দেখুন
[সম্পাদনা]প্রাকৃতিক আকর্ষণ
[সম্পাদনা]পূর্ব আফ্রিকার নাটকীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সেখানকার বন্যপ্রাণী এই অঞ্চলের পর্যটনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এই আফ্রিকান অঞ্চলে আপনি আসল সাভানা সাফারি অভিজ্ঞতা পেতে পারেন—যেখানে ল্যান্ড রোভার চড়ে বিস্তীর্ণ প্রান্তরে সিংহ, চিতা ও হাতির সন্ধানে বের হওয়া যায়।
কেনিয়ার মাসাই মারা এবং অ্যামবোসেলি জাতীয় উদ্যান, আর তানজানিয়ার নগোরংগোরো আগ্নেয়গিরির গর্ত ও সেরেঙ্গেটি জাতীয় উদ্যান গেম ড্রাইভের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় স্থান। এসব স্থানে পর্যটকরা "বিগ ফাইভ"—সিংহ, চিতা, হাতি, গন্ডার ও মহিষ—দেখার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
তবে শুধু এই কয়েকটি স্থানে নয়, কেনিয়া ও তানজানিয়ার আরও বহু এলাকায় বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে সরকারি উদ্যানে সাফারি, সংরক্ষিত এলাকা এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন বিলাসবহুল সাফারি রিসোর্ট, আবার আছে নাইরোবি শহরের মধ্যেই অবস্থিত নাইরোবি ন্যাশনাল পার্কে সকালের দ্রুত একটি গেম ড্রাইভের অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ।
উগান্ডা ও রুয়ান্ডাতেও আকর্ষণীয় সাফারি অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়, তবে এই দুই দেশ সবচেয়ে বেশি পরিচিত গরিলা ট্রেকিং এর জন্য। এটি একটি আজীবন মনে রাখার মতো (এবং খুব ব্যয়বহুল) অভিযাত্রা, যেখানে জঙ্গলের গভীরে গিয়ে সিলভারব্যাক ও পর্বত গরিলা দেখা যায়।
পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাকৃতিক এলাকাগুলোর অনেকটির উপর প্রভাব বিস্তার করে আছে কিলিমাঞ্জারো পর্বত—বিশ্বের সবচেয়ে বিশিষ্ট পর্বত এবং আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এই পর্বতে উঠতে না হলেও বা আলাদা করে খুঁজতে না গেলেও চলবে, কারণ এটি কেনিয়া ও তানজানিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দৃশ্যমান এবং এর রাজসিক সৌন্দর্য সহজেই উপভোগ করা যায়।
মাউন্ট কেনিয়া মধ্য কেনিয়ার উচ্চভূমির প্রাকৃতিক দৃশ্যের উপর আধিপত্য বিস্তার করে আছে। তেমনই, ইথিওপিয়ার সিমিয়েন পর্বতমালা এবং উগান্ডার রুওয়েনজোরি পর্বতমালা ট্রেকারদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয় গন্তব্য।
তবে পূর্ব আফ্রিকা শুধু সমতল ভূমি ও পর্বতে সীমিত নয়। আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলজুড়ে বিস্তীর্ণ মরুভূমি রয়েছে, যেখানে রয়েছে প্রায় ভিনগ্রহের মতো অদ্ভুত এলাকা—যেমন ইথিওপিয়ার ডানাকিল ডিপ্রেশন কিংবা জিবুতির লেক আসাল।
রুয়ান্ডা ও উগান্ডার অনেকটা অঞ্চল ঘন, পাহাড়ি জঙ্গলে আচ্ছাদিত। আর সোয়াহিলি উপকূলের সাদা বালির সমুদ্রসৈকত একটি ভিন্নধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপহার দেয়।
করুন
[সম্পাদনা]পূর্ব আফ্রিকার জাতীয় উদ্যানগুলো বিখ্যাত সাফারি গন্তব্য হিসেবে পরিচিত।
আহার
[সম্পাদনা]পূর্ব আফ্রিকার অনেক দেশে প্রচুর পরিমাণে একটি শস্যজাত কলা খাওয়া হয়, যার নাম "মাটোকে"। এই কলা পশ্চিমা দেশের লোকজনের মতো কাঁচা খাওয়া হয় না, বরং সেদ্ধ বা ভাপে রান্না করে পরিবেশন করা হয়।
আরেকটি জনপ্রিয় খাবার হলো উগালি—যা একধরনের শক্ত মণ্ড, সাধারণত পানি বা দুধে ভিজিয়ে রান্না করা ভুট্টার ময়দা দিয়ে তৈরি হয়।
আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলে খাবারগুলো সাধারণত স্ট্যু ধরনের হয়, যা পরিবেশন করা হয় "ইঞ্জেরা" নামের একধরনের পাতলা রুটি উপর, যা তৈরি হয় "টেফ" নামের একটি শস্য থেকে।
পানীয়
[সম্পাদনা]এই অঞ্চলে খাবার পানি উন্নত দেশগুলোর মত নিরাপদ না, তাই পানির ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি। পুরো পূর্ব আফ্রিকা জুড়ে বোতলজাত পানি পান করাই সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প। এটি শহরাঞ্চল ব্যতীত অন্যান্য অঞ্চলেও সহজলভ্য, যদিও খুব প্রত্যন্ত এলাকায় এটি পাওয়া একটু কঠিন হতে পারে। শহরের বাইরে পাইপলাইনের পানি খুব একটা প্রচলিত নয় এবং সাধারণত তা পানযোগ্যও নয়। এমনকি ফুটিয়েও এর স্বাদ অনেক সময় বাসন ধোয়ার পানির মতো লাগে। গ্রামাঞ্চলে ভ্রমণ করলে বা প্রকৃতির মাঝে দীর্ঘ সময় কাটানোর পরিকল্পনা থাকলে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সঙ্গে রাখা ভালো।
এই অঞ্চলের সবচেয়ে পরিচিত পানীয় সম্ভবত কফি। পূর্ব আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির একটি বড় অংশ কফি উৎপাদন ও রপ্তানির ওপর নির্ভর করে। অনেক দেশে কফি-ভিত্তিক পর্যটনের জন্যও কিছু পরিকাঠামো রয়েছে। যদিও পূর্ব আফ্রিকায় উচ্চমানের বিভিন্ন প্রজাতির কফি উৎপাদিত হয়, পশ্চিমা ধরনের কফি সংস্কৃতি এখনও সাধারণ জনগণের মধ্যে খুব বেশি জনপ্রিয় নয়। এটি মূলত শহরের মধ্য ও উচ্চবিত্তদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে রেস্টুরেন্টে সাধারণ ড্রিপ কফি সহজেই পাওয়া যায়, যদিও এসপ্রেসো জাতীয় পানীয় তুলনামূলকভাবে কম প্রচলিত।
অনেকের কাছে এটি বিস্ময়কর লাগতে পারে যে, পূর্ব আফ্রিকার কিছু অংশে কফির চেয়ে চা অধিক জনপ্রিয়—বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে (যারা অনেক সময় শুধু নেসকাফের মতো তাৎক্ষণিক কফি কিনতে পারেন)। চা এই অঞ্চলে আসে ঔপনিবেশিক আমলে এবং এটি মূলত আর্দ্র ও উচ্চভূমির এলাকাগুলিতে চাষ করা হয়। পূর্ব আফ্রিকার চা সাধারণত অনেক দুধ ও চিনি দিয়ে পরিবেশন করা হয় এবং কখনো কখনো এতে মসলা দিয়ে তৈরি করা হয় যা ভারতীয় চাই-এর মতো। কফি যেমন কিছু উচ্চমানের পাওয়া যায়, পূর্ব আফ্রিকায় চায়ের ক্ষেত্রে তা খুব একটা নেই। এখানে উৎপাদিত চা প্রধানত সাধারণ বাজারের জন্য, যার গুণমান ততটা উন্নত নয়।
ফলমূলের রস পুরো পূর্ব আফ্রিকাজুড়ে পান করা হয় এবং তাজা জুসের মান অনেক ক্ষেত্রেই ভালো। দেশীয় ও বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোমল পানীয় সহজেই পাওয়া যায়। শক্তি বর্ধক পানীয় (এনার্জি ড্রিংক) এই অঞ্চলে নতুন হলেও দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
মদ্যপান পূর্ব আফ্রিকার অমুসলিম অঞ্চলে ব্যাপকভাবে উপভোগ করা হয়; তবে জিবুতি ও সোমালিয়ার মতো মুসলিম দেশগুলোতে এটি একেবারেই অচিন্তনীয়। তবে ইথিওপিয়া বা সোয়াহিলি উপকূলের মতো মিশ্র সংস্কৃতির এলাকায় মদ্যপান প্রচলিত এবং সহজলভ্য। এই অঞ্চলে সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় হলো বিয়ার, যা সর্বত্র পাওয়া যায়। এখানে উৎপাদিত বেশিরভাগ বিয়ার ইউরোপীয় স্টাইলের হালকা ল্যাগার, যদিও গিনেসের শক্তিশালী, ক্যারামেল স্বাদযুক্ত "ফরেন এক্সট্রা" সংস্করণটিও বেশ প্রচলিত। প্রবাসীদের উপস্থিতি বেশি এমন রাজধানী শহরগুলোতে ধীরে ধীরে ক্রাফট বিয়ারও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গ্রামীণ এলাকায় ভ্রমণ করলে আপনি স্বল্প-অ্যালকোহলযুক্ত দেশীয় তৈরি বাজরা বিয়ারের (millet beer) মুখোমুখি হতে পারেন। এই পানীয় সাধারণত বিপজ্জনক না হলেও, চমকপ্রদ স্বাদের অভিজ্ঞতা হবে এমনটা আশা না করাই ভালো।
হার্ড লিকর (উচ্চ অ্যালকোহলযুক্ত মদ) সম্ভবত বিয়ারের পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে—যদিও অনেক সময় এটি অনেক পিছিয়ে থাকে। তবে স্থানীয় ও আমদানি করা দুই ধরনের লিকরই এখানে পাওয়া যায়। পেশাগতভাবে উৎপাদিত লিকরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উগান্ডার ওয়ারাগি এবং তানজানিয়ার কোনিয়াগি—এই দুটি পানীয়ই হালকা ধরণের, নিম্নমানের জিনের মতো। এছাড়াও প্রায় সব দেশেই স্থানীয়ভাবে তৈরি হুইস্কি, রাম ও ভদকার মতো পানীয় পাওয়া যায়, পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বে প্রচলিত মাঝারি দামের ব্র্যান্ডগুলোও সহজলভ্য।
স্থানীয়ভাবে তৈরি অন্যান্য পানীয়ের মধ্যে রয়েছে "কলা বিয়ার"—কলা থেকে তৈরি ফারমেন্টেড পানীয়, যা রুয়ান্ডা ও উগান্ডায় বিভিন্ন স্থানীয় নামে পরিচিত। আর ইথিওপিয়ায় পাওয়া যায় তেজ—এটি এক ধরনের মধুভিত্তিক মদ, যেখানে মধুর স্বাদযুক্ত বিয়ারও তৈরি হয়। ওয়াইন এই অঞ্চলে খুব একটা জনপ্রিয় নয়, কারণ এখানে আঙ্গুরের চাষ সীমিত। তবে শহরাঞ্চলের সুপারমার্কেট ও উচ্চমানের রেস্টুরেন্টে ওয়াইন পাওয়া যায়, যদিও এর বেশিরভাগই আমদানি করা হয়।
সাব-সাহারান আফ্রিকার অন্যান্য অংশের মতো পূর্ব আফ্রিকাও তার নাইটলাইফ বা রাতের বিনোদনের জন্য পরিচিত। কাম্পালা এবং নাইরোবির মতো জনপ্রিয় স্থানে জমজমাট নাইটক্লাবগুলোতে ভোর পর্যন্ত নাচ ও উৎসব চলে। এই অঞ্চলের নৃত্য মঞ্চে স্থানীয় ও মহাদেশীয় হিট গানগুলো প্রাধান্য পায়, তবে আমেরিকান হিপ-হপ, পশ্চিমা ইডিএম এবং ক্যারিবীয় ড্যান্সহল সঙ্গীতও নিয়মিত বাজে। ২০১০-এর দশকে একটি স্থানীয় বিকল্প ইলেকট্রনিক সঙ্গীতধারা গড়ে ওঠে। নাইটক্লাব ছাড়াও স্থানীয় বারগুলো খুবই প্রচলিত, অনেক সময় এগুলো কোনো জনপ্রিয় বিয়ার ব্র্যান্ডের রঙ ও লোগো দিয়ে সাজানো থাকে। এগুলো রাস্তার পাশে কিছু প্লাস্টিকের চেয়ার-টেবিল দিয়ে শুরু হতে পারে, আবার বড় ও জাঁকজমকপূর্ণ মাল্টি-বার কমপ্লেক্সও হতে পারে। জেনে রাখা ভালো, অনেক সময় এমন জায়গাতেও উচ্চস্বরে গান বাজে যেখানে নাচার কোনো স্পষ্ট জায়গা থাকে না—এটি আফ্রিকান সংস্কৃতির অংশ। আর যারা গাইতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য কারাওকে বারগুলোও বেশ জনপ্রিয়।
নিরাপত্তা
[সম্পাদনা]যদি আপনি নৌকা, ইয়ট বা জেট স্কিতে করে ভ্রমণ করেন তাহলে আপনাকে অ্যাডেন উপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের আশেপাশে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ সেখানে সোমালি জলদস্যুদের কার্যকলাপ রয়েছে। এছাড়াও পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে জিহাদিদের দ্বারা অমুসলিমদের উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে, যেখানে তারা কোরআন সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করত।
পরবর্তী গন্তব্য
[সম্পাদনা]তানজানিয়া থেকে সহজেই দক্ষিণ আফ্রিকা পৌঁছানো যায় এবং এই দুটি অঞ্চলের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। এছাড়াও আপনি মধ্য আফ্রিকা এবং সাহেল অঞ্চলেও ভ্রমণ করতে পারেন।
বিমানযোগে মধ্যপ্রাচ্যতে পৌঁছানো যায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, কারণ এটি পূর্ব আফ্রিকার কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে।