দার্জিলিং
দার্জিলিং (নেপালি: दार्जिलिङ Dārjiliṅ, বাংলা: দার্জিলিং Dārjiliṁ) পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত একটি শৈলশহর। এটি একসময় হিমালয়ের পাদদেশে নির্মিত এক মনোরম শহর ছিল, যার কিছু নিদর্শন এখনও চৌরাস্তায় দেখা যায়। দার্জিলিং আজও কলকাতার মানুষের কাছে গ্রীষ্ম ও শরতের জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। এখানকার মূল আকর্ষণ হলো তিব্বতি ও নেপালি সংস্কৃতির বৈচিত্র্য। এছাড়াও, এটি সিকিমে যাত্রার অন্যতম প্রবেশদ্বার।
জানুন
[সম্পাদনা]
কীভাবে যাবেন
[সম্পাদনা]সড়কপথে
[সম্পাদনা]পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহর থেকে বাসে শিলিগুড়ি যাওয়া যায়। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং ৮০ কিমি। শেয়ার জিপ (ভাড়া মাথাপিছু ১৫০ টাকা) বা গাড়িভাড়া বা বাসে (ভাড়া মাথাপিছু ১০৩ টাকা) করে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পৌঁছানো যায়।
রেলপথে
[সম্পাদনা]নিকটতম রেলস্টেশন শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে স্টেশন বা এন জে পি। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের হেরিটেজ টয়ট্রেনে চড়েও দার্জিলিং যাওয়া যায়। দার্জিলিং শহরের আশপাশে ঘোরার জন্য মরসুমে ডি.জি.এইচ.সি. কন্ডাক্টেড ট্যুরের ব্যবস্থা করে। টয় ট্রেনের জয় রাইডেও বেড়িয়ে নেওয়া যায় দার্জিলিং থেকে ঘুম।
আকাশপথে
[সম্পাদনা]সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর বাগডোগরায় অবস্থিত, দার্জিলিং থেকে ৯৬ কি.মি. দূরে।
কী দেখবেন
[সম্পাদনা]- 1 জাপানিজ টেম্পল এবং পীস প্যাগোডা। শহরের খুব কাছেই এই টেম্পল টি। জীপে যেতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিটের মত। এই বৌদ্ধ মন্দির টি জাপানী সাধুর অর্থায়নে তৈরি বলে একে জাপানি টেম্পল বলা হয়। প্রথমে সিড়ি বেয়ে উঠতেই একটি মন্দির চোখে পড়বে যেটার দরজায় বিশাল সোনালি রঙের দুটি সিংহ মূর্তি আছে এবং এর ভিতরে বড় জাপানি সাধুর মূর্তি রয়েছে। ডান দিকে চোখে পড়বে পেস প্যাগোডা। পেস প্যাগোডার অর্ধেক টা উপড়ে উঠার সিড়ি আছে।পুরো প্যাগোডা এলাকাটি নীরব এবং শান্ত এবং ইহা একটি ধর্মীয় পবিত্র স্থান।
- 2 বাতাসিয়া লুপ। টাইগার হিলে যাবার পথেই পরবে অপরূপ সুন্দর এর জায়গাটি। এখানেই দার্জিলিং এর টয় ট্রেন ৩৬০ ডিগ্রীতে ঘুরে আবার ঘুম ষ্টেশনের দিকে যায়।
- 3 ঘুম মনেস্ট্রি। টাইগার হিলে যাবার পথে এই মন্দিরটি পড়বে হাইওয়ের পাশেই। মেইন রোড থেকে সিঁড়ি দিয়ে কিছুটা নিচে নেমে যেতে হয়। ভিতরে বিশাল বৌদ্ধ মূর্তি আছে।
- 4 রক গার্ডেন (বারবতে রক গার্ডেন) (দার্জিলিং থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার (৬.২ মা) দূরে এর অবস্থা)। শহর থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট নিচে নেমে যেতে হবে এই বাহারি ঝর্নার বাগান দেখতে হলে। ঝর্নার প্রতিটা জলক্ষেপ দেখার জন্য আছে সুন্দর পথ ও সিঁড়ির ব্যবস্থা। চাইলে একদম উপর পর্যন্ত উঠে ঝর্ণা ও তার আশপাশ এর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখানে আছে বাহারি ফুলের বাগান। এছাড়াও নেপালিদের সাজে সাজার জন্য এখানে ভাড়ায় নেপালী পোশাক পাওয়া যায়।
- গঙ্গামায়া পার্ক। রক গার্ডেনের রাস্তা ধরে ৩ কিমি সামনেই এই পার্ক।
- চা-বাগান। শহরের খুব কাছেই এই দৃষ্টিনন্দন চা বাগান টি। এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো এর আশেপাশের চায়ের দোকানে বসে এক কাপ চা পান করা।
- দার্জিলিং রোপওয়ে/কেবল কার। চা-বাগান থেকে ফেরার পথেই তেঞ্জিং রক পার হলেই দার্জিলিং কেবল কার। এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যেতে প্রায় ১৫ মিনিট সময় লাগে।
- 5 তেনজিং রক। হিমালয় মাউন্টেন ইন্সটিটিউট এর একটু সামনেই চা বাগানের আগেই পড়বে তেনজিং রক। তেনজিং রক একটি বিশাল পর্বতের ছোট খাটো নমুনা। একটি পাথরের টুকরোই পুরো পর্বতের ন্যায় দেখতে।
- 6 'হিমালয় মাউন্টেন ইন্সটিটিউট, মিউজিয়াম। এখানে একসাথে আছে মাউন্টেন ইন্সটিটিউট ও মিউজিয়াম। একজন পর্বত আরোহীর পাহাড়ে কি কি কাজ, কীভাবে ট্রেকিং, ক্লাইম্বি করবে, কোথায় কীভাবে পারাপার হবে, এভারেস্ট জয়ীদের বিভিন্ন স্মৃতি চিহ্নসহ আরো অনেক ইতিহাস সংরক্ষিত আছে এই মিউজিয়ামে।
- 7 টাইগার হিল। শহর থেকে কিছুটা দূরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই টাইগার হিল পয়েন্ট। পর্যটকের দেখার সুবিধার্থে এখানে একটি ঘর ও বানিয়ে রাখা হয়েছে গোলাকার যেখানে দাঁড়িয়ে সবাই সূর্যোদয় দেখতে পারে।পৃথিবীর তৃতীয় সরবোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা কে এখান থেকে দেখা যায়।
- দার্জিলিং মল। শহরের সবচেয়ে উচু চূড়ার নাম মল চূড়া। এখান থেকে আশেপাশের প্রকৃতি খুব ভালোভাবে দর্শন করা যায় এবং আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও দেখা যায় এই চূড়া থেকে।
- আভা আর্ট চিত্রশালা। দার্জিলিং শহরের মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে জাপানিজ প্যাগোডা দেখতে যেতে পথেই পরবে আভা আর্ট চিত্রশালা। উজ্জ্বল লাল ও হলুদ বর্ণের এই বিল্ডিং এর ভিতরেই আর্ট চিত্রশালাটি।
- 8 পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিকাল পার্ক (দার্জিলিং চিড়িয়াখানা)। ৬৭.৫৬ একর(২৭.৩ হেক্টর) স্থানজুড়ে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানায় রেড পান্ডা, স্নো লেপার্ড, তিব্বতীয় নেকড়েসহ পূর্ব হিমালয়ের প্রচুর বিপদগ্রস্ত ও বিলুপ্ত পক্ষী ও প্রাণীদের দেখতে পাওয়া যায়।
- 9 ধীরধাম মন্দির। এটি কাঠমান্ডুর বিখ্যাত পশুপতিনাথ মন্দিরের অনুরূপ।
- 10 বেঙ্গল ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়াম। জাদুঘরটিতে ১১০ টি প্রজাতির ডিম, ৩৫ টি প্রজাতির সাপ এবং ৫৭ টি প্রজাতির মাছ সহ ৪০০ প্রজাতির পাখির ৮২০ টি নমুনাসহ প্রচুর প্রাকৃতিক নিদর্শন এবং জীবাশ্ম রয়েছে।
- 11 লাওডস্ বোটানিকাল গার্ডেন। এই উদ্যানে অর্কিড, রডোডেনড্রন, ম্যাগনোলিয়া, প্রিমুলা, ফার্নসহ নানা জাতের হিমালয়ান উদ্ভিদ পাওয়া যায়।
- লেবং রেস কোর্স। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট এবং সর্বোচ্চ রেস কোর্স।
- 12 দার্জিলিং রঙ্গীত ভ্যালি প্যাসেঞ্জার রোপওয়ে (দার্জিলিং রোপওয়ে)। ৫ কিমি দীর্ঘ রোপওয়ে ১৯৬৮ সালে প্রথম দার্জিলিং ও সিংলাবাজার এর মধ্যে চা বাগানের উপর দিয়ে চালু হয়। এই রোপওয়ে পথের নিচে রয়েছে রাম্মাম নদী ও রাম্মাম উপত্যকা।
মাথাপিছু ₹২০০ প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যে, এবং ছোটদের জন্য মাথাপিছু ₹১০০।
খাওয়া দাওয়া
[সম্পাদনা]
দার্জিলিং ম্যালের উপর একাধিক খাবারের রেস্তোরাঁ আছে। কয়েকটা মুসলিম হোটেলও আছে। খাবারের সিস্টেম মূলত প্যাকেজ আকারে। মানে ভাত, মাছ, ডাল ৮০-১২০ রুটি এরকম। সকালের খাবারে রুটির সাথেও ডিম/ও কোয়াশ নামক সব্জির এমন প্যাকেজ পাওয়া যাবে। খাবারের দাম খুব একটা বেশি নয়। এছাড়াও আধুনিক সব খাবারই পাওয়া যায় দার্জিলিংয়ে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, দার্জিলিং শহর খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ৮-৯ টা নাগাদ অব্দি হোটেল খোলা পাবেন। তার পর সব বন্ধ হয়ে যায়। তাই এই সময়ের আগেই ডিনার সেরে ফেলতে হবে।
রাত্রিযাপন
[সম্পাদনা]দার্জিলিং শহরে পর্যটকদের জন্য ভালো মানের কিছু আবাসিক হোটেল ও হলিডে হোম রয়েছে।
- দার্জিলিং ট্যুরিস্ট লজ, ☎ +৯১ ৩৫৪ ২২৫৪৪১১-১২-১৩, ফ্যাক্স: +৯১ ৩৫৪ ২২৫৪৪১২, ইমেইল: [email protected]। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশন দ্বারা পরিচালিত
৯০০-১৬০০।
- 1 দ্য এলগিন্, এইচ.ডি.লামা রোড, ☎ +৯১ ৩৫৪-২২৭২২৬/২৭ , ইমেইল: [email protected]।
- সেন্ট্র্যাল হেরিটেজ, রবার্টসন রোড, ☎ +৯১ ৩৫৪-২২৫৮৭২১/২২/২৩ , ফ্যাক্স: ০৩৫৪ – ২২৫৮৭২০।
- পাইনরীজ হোটেল, দ্য মল রোড, পিন ৭৩৪১০১, ☎ +৯১ ৩৫৪-২২৫৪০৭৪/২২৫৩৯০৯ , ফ্যাক্স: ০৩৫৪ – ২২৫৩৯১২, ইমেইল: [email protected]।
- দার্জিলিং জিমখানা রিসর্ট, দ্য মল রোড, চৌরাস্তা, পিন ৭৩৪১০১, ☎ +৯১ ৩৫৪ – ২২৫২৩২৮ , ২২৫২৩২৯ , ৯৭৭৫৯২৯৮১৪ ।
- হোটেল সোনার বাংলা দার্জিলিং, ১/১, রবার্টসন রোড, ☎ +৯১ ৩৫৪-২২৫৮৩৬৯, ৯২৩২৪৯৬০২০ , ইমেইল: [email protected]।
- দ্য এলগিন্, ১৮, এইচ.ডি.লামা রোড, ☎ +৯১ ৩৫৪ – ২২৫৭২২৬/২৭ , ফ্যাক্স: ০৩৫৪ – ২২৫৪২৬৭০।
৭৫০০/- টাকা (আই.এন.আর) থেকে ৯৫০০/- টাকা (আই.এন.আর)।
- হোটেল মোহিত, এইচ.ডি.লামা রোড, ☎ +৯১ ৩৫৪ – ২২৫৪৭২৩ , ২২৫৪৮১৮ , ২২৫৫৩২৭ , ফ্যাক্স: ০৩৫৪ – ২২৫৪৩৫১, ইমেইল: [email protected]।
১৫০০/- টাকা (আই.এন.আর) থেকে ৫২০০/- টাকা (আই.এন.আর)।
এছাড়াও দার্জিলিংএ শহর জুড়েই নানান মান ও দামের বেসরকারি হোটেল এবং হলিডে হোম রয়েছে।