মেধা কচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান
মেধা কচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের একটি দর্শনীয় স্থান, যা কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত। এটি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অঞ্চলে স্থাপিত যা রাজধানী ঢাকা হতে প্রায় ৪৪০ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত, যা ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষিত হয়। এই সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যানের আয়তন প্রায় ৩৯৫.৯২ হেক্টর।
বিশেষত্ব
[সম্পাদনা]মেধা কচ্ছপিয়া বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উপজেলা কক্সবাজার সদরের অন্তর্গত একটি পার্বত্য এলাকা ও পর্যটনকেন্দ্র। কক্সবাজার জেলা সদরের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত এই এলাকাটি এর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য সুবিদিত। এই বনটি তার সুবিশাল মাদার গর্জন গাছের জন্য সুপরিচিত। মেধা কচ্ছপিয়া একটি প্রাকৃতিক বন।
এখানে জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হল শতবর্ষী গর্জন বনকে রক্ষা করা। এই উপমহাদেশে যে অল্প কিছু গর্জন বন আজও মাথা উঁচু করে আছে। এ বনটি তার মধ্যে অন্যতম। এই জাতীয় উদ্যানের প্রধান বৃক্ষরাজির মধ্যে বিশালাকৃতির গর্জন ছাড়াও রয়েছে ঢাকিজাম, ভাদি, তেলসুর ও চাপালিশ।
এখানকার বনের প্রকৃতি হলো ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বন। এ উদ্যানটি কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন। পার্কটির ১ থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে আনুমানিক ১৮৩০৫ জন লোকের ৩৫২৩টি পরিবার বসবাস করে। এসব স্থানীয় গ্রাম কিংবা পাড়া গুলো মূলতঃ কৃষিকাজ, লবণ চাষ ও মৎস্য চাষের উপর নির্ভরশীল। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের কারণে এ সকল জনগোষ্টিতে ক্রমান্বয়ে জন সংখ্যার চাপ বাড়ছে এবং বনভূমি তথা জাতীয় উদ্যানটির ক্ষতি হচ্ছে।
কীভাবে যাবেন
[সম্পাদনা]ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও বিমান সকল পথেই কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪৪০ কি.মি.। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে কক্সবাজার রুটের বাসগুলো ছেড়ে যায়; তবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, কমলাপুর, মতিঝিল ও আরামবাগ থেকে অধিকাংশ বাস ছেড়ে যায়। এই রুটে এসি ও নন-এসি উভয় ধরনের বাস রয়েছে। এই রুটে চলাচলকারী উল্লেখযোগ্য পরিবহনগুলোর মধ্যে রয়েছে – গ্রীন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী এন্টারপ্রাইজ, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া, এস.আলম. পরিবহন, মডার্ন লাইন, শাহ বাহাদুর, সেন্টমার্টিন প্রভৃতি।
ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের সাথে এখনো কোনো রেল যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি। রেলে করে কক্সবাজার যেতে চাইলে প্রথমে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে হবে। চট্টগ্রামের চকরিয়া থেকে বিভিন্ন পরিবহনের অসংখ্য বাস রয়েছে সরাসরি কক্সবাজারে যাওয়ার। চকরিয়া থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৫৭ কি.মি.।
ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের সাথে বিমান যোগাযোগ রয়েছে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট প্রতিদিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচল করে। অপরদিকে, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান হতে বিমানে চট্টগ্রাম এসে সেখান থেকে সেখান থেকে লেগুনা, হিউম্যান হলার, সিএনজি অটো রিক্সা বা বাসে মেধা কচ্ছপিয়া আসতে হয়।
অপ্রচলিত মাধ্যম হিসাবে নৌপথ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বহিঃবিশ্ব হতে সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম এসে সেখান থেকে লেগুনা, হিউম্যান হলার, সিএনজি অটো রিক্সা বা বাসে মেধা কচ্ছপিয়া আসা যায়।
ঘুরে দেখুন
[সম্পাদনা]নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে বেড়াতে পারেন; এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো -
- কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত;
- হিমছড়ি;
- ইনানী সমুদ্র সৈকত;
- সেন্টমার্টিন দ্বীপ;
- ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক;
- ছেঁড়া দ্বীপ;
- শাহপরীর দ্বীপ;
- সোনাদিয়া দ্বীপ;
- রামু উপজেলা;
- কুতুবদিয়া দ্বীপ;
- মহেশখালী দ্বীপ;
- শাহ ওমরের সমাধি, চকরিয়া;
- মানিকপুরের ফজল কুকের সাতগম্বুজ মসজিদ;
- মাথিনের কূপ , টেকনাফ;
- রামকোট বৌদ্ধ বিহার;
- রাখাইন পাড়া;
- অগ্গমেধা বৌদ্ধ বিহার।
কোথায় থাকবেন
[সম্পাদনা]কক্সবাজারে থাকার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের অসংখ্য মানসম্মত রেস্ট হাউস ও বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে পুরো শহর জুড়ে, যেখানে ২০০ থেকে ২০,০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাওয়া যায়। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকার জন্যে রয়েছে উন্নতমানের -
- জেলা পরিষদ ডাকবাংলো - কক্সবাজার।
- সার্কিট হাউস - কক্সবাজার।
কী খাবেন
[সম্পাদনা]এখানকার প্রায় প্রতিটি আবাসিক হোটেল বা হোটেলের সন্নিকটে রেস্তোরাঁ বা খাবার হোটেল রয়েছে। কক্সবাজারে ভ্রমণে গিয়ে পর্যটকদের বেশি আকর্ষণ থাকে স্থানীয় আদিবাসীদের বিভিন্ন মেন্যুর প্রতি। বিশেষ করে চিংড়ি, রূপচাঁদা, লাইট্যা, ছুরি মাছসহ মজাদার শুটকি মাছের ভর্তার প্রতিই পর্যটকদের আকর্ষণ বেশি থাকে। খাবারের মেন্যু অনুযায়ী একে রেস্তোরাঁয় একেক ধরনের মূল্য তালিকা দেখা যায়।
সতর্কতা
[সম্পাদনা]যেকোনো সমস্যায় যোগাযোগ করতে পারেন -
- জননিরাপত্তা সম্পর্কিত যোগাযোগের জন্য
- ওসি কোতয়ালী, কক্সবাজারঃ মোবাইল: ০১৭১৩-৩৭৪ ৩৭৫;
- পুলিশ সুপার, কক্সবাজারঃ মোবাইল: ০১৭১৩-৩৭৪ ৩৬৬।